চোখে অশ্রু নেই কান্না থেমে গেছে, তবুও আমরা থেমে থাকিনি!

চোখে অশ্রু নেই কান্না থেমে গেছে, তবুও আমরা থেমে থাকিনি!

পত্রিকার পাতায় প্রিজনভ্যানে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রের কান্নার ছবি আর আদালত পাড়ায় এক মায়ের আহাজারীর ছবি পুরনো স্মৃতিকে নতুন করে জাগিয়ে দিয়েছে। দেশের সর্ব্বোচ্চ বিদ্যাপিঠের ছাত্রদেরকে রিমান্ডে পাঠানো, কোমরে দড়ি বেঁধে আদালতে হাজির করার ছবি ব্যাথাতুর হৃদয়টাকে আরো ব্যাথিত করেছে। নিরপরাধ সাধারন ছাত্রদের প্রতি এমন নিষ্ঠুর আচরণ অবৈধ আওয়ামী সরকারের দেউলিয়া রাজনীতির নগ্ন বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। এমন স্বৈরাচারী আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

সাধারন ছাত্র-ছাত্রীসহ দেশের জনগনের উপর এমন নিষ্ঠুর আচরণ এবারই প্রথম নয়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রশিবির নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতার করে এমন আচরণ ২০০৯ সাল থেকেই এই সরকার করে আসছে।

একসময় গ্রেপ্তার, জুলুম, নির্যাতন, রিমান্ড, হত্যা, গুম- এগুলো জামায়াত এবং ছাত্রশিবিরের সাথে সম্পৃক্ত বিষয় ছিল। সময়ের ব্যবধানে আজ এটি বাংলাদেশের আপামর জনগনের উপর পরিচালিত হচ্ছে। একসময় শুধু ছাত্রশিবির আর জামায়াতের ঘরে ঘরেই মায়ের কান্না আর বোনের আহাজারি ছিল। আজ প্রতিটি ছাত্রের ঘরে কান্নার রোল আর মা-বোনের আহাজারি চলছে। একসময় জামায়াত নেতৃবৃন্দকে গুম করে খুন করা হত, রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের স্টীম রোলার চালানো হত, রাজপথে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে প্রকাশ্যে পিটিয়ে শরীর রক্তাক্ত করা হত; আজ শুধু জামায়াতই নয় বরং জামায়াত ও ছাত্রশিবির কর্মীদের পাশাপাশি সরকারের সাপোর্টকারী বামদলের লোকজনকেও এসব বর্বরতা থেকে রেহাই দেয়া হচ্ছে না। রেহাই পাচ্ছে না সাধারন নাগরিক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবি, শিক্ষক কেউই। একটি সরকার কতটা বর্বর, কতটা বেপরোয়া হলে গোটা জনগোষ্ঠির সবাইকেই তার প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে নির্যাতনের স্টীম রোলার চালাতে পারে!

যখন ছাত্রলীগ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের সামনে ছাত্রশিবিরের এক নেতার পা কেটে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল তখন কেউ কিছু বলেনি, কারণ এরা ছাত্রশিবির এদের পা কাটতেই পারে! যখন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতিকে গ্রেফতার করে ডান্ডাবেড়ী পরানো হয়েছিল, একাধারে ৫৩ দিন রিমান্ডে নির্মম নির্যাতন করে পঙ্গু করে দেয়া হয়েছিল তখন কেউ প্রতিবাদ করেনি; কারন শিবিরের সভাপতির সাথে এমনটি হতেই পারে! যখন জামায়াত নেতৃবৃন্দ ও আলেম ওলামাদের গ্রেপ্তার করে একাধারে দশ ২০ দিন রিমান্ডে নেয়া হয়েছে, তখন কেউ এগিয়ে আসেনি; কারণ এরা জামায়াতের লোক এদের সাথে এসব স্বাভাবিক ঘটনা মাত্র!

কিন্তু আজ কোমলমতি শিক্ষার্থীদের উপর হামলা গুলি চালানো হচ্ছে। ইস্টওয়েট বিশ্ববিদ্যালয়ের মত সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে পুলিশ ছাত্রলীগ যুবলীগ যৌথ হামলা চালাচ্ছে। হামলাকারী হেলমেটধারী সন্ত্রাসীরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে, দিনদুপুরে সাংবাদিক নির্যাতনকারী ছাত্রলীগের গুন্ডারা আইনের শাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অপরদিকে ন্যায্য দাবী আদায়ের জন্য যারা আন্দোলন করেছিল তাদের কোমরে রশি বেঁধে আর পিঠে পুলিশের লাঠির বাড়ি দিয়ে আদালতে হাজির করা হচ্ছে। সত্য প্রকাশের অপরাধে(!) রিমান্ডে নিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত করে রক্তমাখা জামা শুকিয়ে সেই জামা পরিয়ে টেনে হিচড়ে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হচ্ছে।

আজ শুধু সাদা জামাতেই রক্তের দাগ পড়েনি। আজ প্রত্যেকের ঘরে ঘরেই নির্যাতনের ক্ষতচিহ্ন বিদ্যমান। আজ প্রতিটি ঘরে ঘরে আহাজারি। যৌক্তিক দাবী করায় প্রতিটি ছাত্রের পিঠেই লাঠির বাড়ি আর রাবার বুলেটের ক্ষতচিহ্ন। এই জুলুম শুধু আমার আপনার বিরুদ্ধে নয়। এই নির্যাতন শুধু ছাত্রসমাজের উপর নয়। বরং এটি আমাদের দেশ, মাটি ও মানুষের বিরুদ্ধে। এখনই আমাদের এই অন্যায়, এই জুলুম রুখে দাঁড়াতে হবে। এদেশ আমাদের, এদেশের মাটি আমাদের। তাই, এদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, জনগনের মৌলিক অধিকার, ধর্মীয় ও বাক স্বাধীনতা নিশ্চিত করার দায়িত্ব ছাত্র ও যুব সমাজকেই নিতে হবে।

আমরা শত আঘাত পেয়েছি, আঘাত পেতে পেতে আমরা এখন আঘাত সহ্য করা শিখে নিয়েছি। কাঁদতে কাঁদতে আমাদের চোখে আর অশ্রু নেই। এখন আর আমাদের কান্না আসে না, কান্না থেমে গেছে। এখন জেল-যুলুম, নির্যাতনকে আমরা পরোয়া করিনা। এগুলোকে আমরা ডালভাত মনে করি। এখন গুম খুন আমাদের কাছে এখন আর ভীতির কারন নয়। কারন, আমরা দৃঢ় বিশ্বাস করি মৃত্যুর ফায়সাল আসমানে হয় জমিনে নয়। এ অবৈধ সরকারের বিগত সাড়ে ৯ বছরে আমাদের কয়েক’শ নেতাকর্মী শহীদ হয়েছে। হাজার হাজার নেতাকর্মী কারাগারে গিয়েছে। শতশত নেতাকর্মী চোখ হারিয়েছে, পা হারিয়ে পঙ্গু হয়েছে। এতোকিছুর পরেও আল্লাহর মেহেরবানীতে আমরা দমে যাইনি। আমি নিজেও দু’দফায় ১৯ মাস কারাবরণ করেছি। কারাগারকে আমরা রাসুলের(সাঃ) সুন্নাত আর মহান রবের নৈকট্য অজর্নের সুযোগ হিসেবে বেছে নিয়েছি।

আমরা হতাশ নই; ছাত্র সমাজকে বলবো- তোমরা হতাশ হয়োনা। তোমাদের এ দুঃখ-কষ্টে আমরা ব্যথিত, অনেক বেশী ভারাক্রান্ত। তোমাদের পাশে আমরা সার্বক্ষণিক আছি, থাকব ইনশাআল্লাহ। তোমাদের যৌক্তিক আন্দোলনে আমরা সব সময় পাশে ছিলাম আগামী দিনেও পাশে থাকবো। এটা ভেবোনা যে, সরকার ব্লেম দিলেই ছাত্র সমাজকে রেখে আমরা দুরে সরে যাবো। বরং আমরা আরো দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিবো। জুলুম নির্যাতন আর অপপ্রচারে আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে ঠিকই, কিন্তু এখনও তো দেয়াল ভেঙ্গে যায়নি! নতুন করে লড়াইয়ের জন্য আমরা প্রস্তুত। আমাদের এ লড়াই আগামী প্রজন্মের জন্য এক সুন্দর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মানের।

নতুন এক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মানে প্রয়োজনে আমরা আরো শহীদ হতে প্রস্তুত, আরো কারাগারে যেতে প্রস্তুত। জেল জুলুম গুম খুনেও আমরা কখনও একচুল পিছপা হইনি হবোও না। আমরা সত্যের পথে আছি মিথ্যার সাথে কোন আপোষ করবো না, জালিমের কাছে মাথা নত করবো না ইনশা-আল্লাহ।

ছাত্রসমাজের সাথে ছাত্রশিবির ছিল, আছে এবং থাকবে। আমরা ছাত্র সমাজের সকলকে সাথে নিয়েই আগামীর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ, ক্ষুধা দারিদ্রমুক্ত শোষণ বঞ্চনা ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে চাই। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দিন। আমীন।