কারাগারে আল্লামা সাঈদীকে যেমন দেখেছি

কারাগারে আল্লামা সাঈদীকে যেমন দেখেছি

গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আসা আর নির্যাতনের শিকার হয়ে যে দুঃখ কষ্ট ও যাতনার শিকার হয়েছি তা অনেকাংশে লাঘব হয় জাতীয় নেতৃবৃন্দের সাথে সাক্ষাৎ হয়ে। ২০১০ সালের ২৯ জুন গ্রেফতার হয়ে কারাগারে বন্দী আছেন বিশ্ববরেণ্য মুফাসসিরে কুরআন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। ২০১১ সালে আমি যখন প্রথম কারাবন্দী হই তখন কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে কোর্টে যাওয়ার পথে একদিন হুজুরের সাথে সাক্ষাৎ হয়। তাও কয়েক সেকেন্ডের জন্য মাত্র। আমরা কোর্টে যাওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলাম এ সময় সাঈদী সাহেবও ট্রাইব্যুনালে যাচ্ছিলেন। কারারক্ষীদের বাধার মুখেও তখন হুজুরের সাথে সালাম বিনিময় আর মোসাফাহ করার সুযোগ পাই। তখন কেন্দ্রীয় কারাগারে বেশি কড়াকড়ি থাকায় আর সুযোগ হয়নি। আমাদের কিছু ভাই তখন ট্রাইব্যুনালে যাওয়া-আসার সময় শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী সাহেবসহ জাতীয় নেতৃবৃন্দের সাক্ষাৎ লাভের আশায় কারা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বন্দীদের জন্য ব্যবস্থাকৃত মৎস্য প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশ নেয়। উদ্দেশ্য একটাই পাশ দিয়ে নেতৃবৃন্দ যখন যাবেন তখন সালাম ও দোয়া নেয়ার সুযোগ হাতছাড়া করবেন না। মৎস্য প্রশিক্ষণ কোর্সের কেন্দ্রটি ছিল কারাগারের মূল গেটে যাতায়াতের রাস্তার পাশেই। কিছুদিন পর বিষয়টি কারা কর্তৃপক্ষের নজরে এলে কারা কর্তৃপক্ষ মৎস্য প্রশিক্ষণ কোর্সে জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের বন্দীদের অংশগ্রহণ করা মাইকে ঘোষণা দিয়ে বন্ধ করে দেয়। কয়েকজনের ওয়ার্ড কেটে শাস্তিস্বরূপ আমদানি ওয়ার্ডে পাঠিয়ে দেয়। এত কিছুর মধ্যেও দমানো যেত না বন্দীদের। ফাঁকফোকর খুঁজে বের করে নেতৃবৃন্দের সাক্ষাৎ ও দোয়া লাভের প্রত্যাশায় সুযোগ খুঁজে বেড়াত তারা। শুধু যে জামায়াত বা ছাত্রশিবিরের বন্দীদের মধ্যেই এই প্রবণতা ছিল তা নয় বরং সাধারণ বন্দীরাও চাইত জামায়াত নেতৃবৃন্দের সাথে একটু হ্যান্ডশ্যাক করতে, একটু বুক মেলাতে।

২৫ মে ২০১৩ কেন্দ্রীয় সাহিত্য সম্পাদক থাকা অবস্থায় দ্বিতীয়বার গ্রেফতার হই। বন্দী হওয়ার পর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ২১ অক্টোবর ২০১৩ চালানে কাশিমপুর-১ এ আমাকে পাঠানো হয়। তখন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী হুজুর কাশিমপুর-১ এর মেডিক্যাল এলাকায় ফাঁসির সেলের ৩ নম্বর কক্ষে বন্দী ছিলেন। আমার অবস্থান ছিল চিত্রা বিল্ডিংয়ের ১১ নম্বর কক্ষে। এখানে আসার পরও ব্যাকুল ছিলাম সাঈদী সাহেবের সাথে সাক্ষাতের সুযোগ লাভের অপেক্ষায়। এখানেও কড়াকড়ি হুজুরের সাথে সাক্ষাতের ব্যাপারে। চিত্রা বিল্ডিং থেকে দূরে ছিল মেডিক্যাল ওয়ার্ড এলাকা। এই এলাকায় মেডিক্যালের একটি ওয়ার্ডের পাশেই ফাঁসির সেলে বন্দী ছিলেন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। অবশেষে কাশিমপুরে আসার প্রায় ১৫ দিন পর মেডিক্যালে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার সুযোগে হুজুরের সাথে সাক্ষাৎ লাভ করি। দুপুরে খাওয়ার পর তিনি একটু বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। কয়েকটি সাদামাটা কম্বল দিয়ে মেঝেতে পাতা বিছানায় তিনি শুয়ে ছিলেন। হুজুরের সেলটির আয়তন ছিল প্রায় ১২/৫ ফিটের মতো মাত্র। আমি সালাম দিয়ে প্রবেশ করতেই তিনি উঠে বসলেন, আর আমি সামনে পাতা জায়নামাজে বসে পরিচয় দিয়ে কথা বললাম। কক্ষের ভেতরেই কোমর সমান দেয়ালে আড়াল করা টয়লেটে দেখলাম বাথ চেয়ার বসানো, কোমরে সমস্যার কারণে এই চেয়ার ব্যবহার করতে হয়। মাথার পাশে কুরআনের তাফসির আর কিছু ইসলামী সাহিত্য, জামা-কাপড়গুলো দড়িতে ঝুলানো। অন্ধকার ছোট্ট একটি কক্ষের ভেতরে বন্দী হয়ে আছেন বিশ্ববরেণ্য মুফাসসির কোটি কোটি জনতার নয়নের মণি আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। ভাবতেই আমার গা শিউরে উঠলো, প্রচন্ড কষ্ট নিয়েও নিজেকে সামলে নিলাম। তিনি আমাকে ভালোভাবেই চিনতে পারলেন কারণ, এর আগে কয়েকটি প্রোগ্রামে হুজুরের সাথে আমার দেখা ও কথা হয়েছিল। সরকারি মাদরাসা-ই-আলিয়া,ঢাকার সভাপতি থাকা কালীন শহীদবাগে উনার বাসায় গিয়ে একবার দেখাও করেছিলাম। তা ছাড়া ২০০৫ সালে ঢাকা আলিয়ার সেক্রেটারি থাকা অবস্থায় ৪ এপ্রিল ছাত্রদলের সাথে সংঘর্ষে মারাত্মক আহত হয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হলে তিনি আমাকে দেখতে যান এবং আমার শিয়রে দাঁড়িয়ে আমার সুস্থতা কামনায় দোয়া করেন। সেই দিনটির কথাও হুজুরের স্মরণে ছিল।

কাশিমপুরে বন্দী থাকা অবস্থায় এরপরও আরো কয়েকবার সাঈদী সাহেবের সাথে সাক্ষাতের সুযোগ হয়। ১৬ এপ্রিল ’১৪ কোর্টে যাওয়ার পথে দেখা হলে তিনি তার কক্ষ থেকে আমাদেরকে এক প্যাকেট বিস্কিট দেন কোর্টে অবস্থানকালীন খাওয়ার জন্য। কাশিমপুর-১ এর বন্দীদের কোর্টে নিয়ে যাওয়া উপলক্ষে সবাইকে মেডিক্যাল এলাকায় নিয়ে আসা হয় আর সেই সুবাদেই হুজুরের সাথে সাক্ষাৎ হয়। আর হুজুর সে সময়টাতে হাঁটতে বের হন। কড়াকড়ির কারণে হুজুরের সাথে সাক্ষাৎ করতে না পারা নেতাকর্মীরা নানানভাবে সুযোগ খুঁজতেন। একদিন শিবিরের এক কর্মী (মেঘনা ওয়ার্ডের) রাত ১১টার দিকে হঠাৎ বমি শুরু করে। তার অবস্থা বেগতিক দেখে রাত্রেই কারারক্ষীরা তাকে মেডিক্যাল ওয়ার্ডে পাঠিয়ে দেয়। পরদিন সুস্থ হয়ে দুপুর নাগাদ সে আবার মেঘনা ওয়ার্ডে ফিরে আসে। তার ওয়ার্ডের লোকজন কৌতূহলী হয়ে তাড়াতাড়ি সুস্থ হওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করলে সে জানায়, সে মূলত অসুস্থ ছিল না, মুখের ভেতরে হাত ঢুকিয়ে বমির ভান করেছে মাত্র, কারণ অসুস্থতা দেখালে তাকে মেডিক্যাল ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হবে। আর পরদিন ভোরে সাঈদী হুজুর যখন হাঁটতে বের হবেন তখন হুজুরের সাথে সাক্ষাৎ করে দোয়া নেয়ার সুযোগ পাওয়া যাবে। হুজুরের সাথে সাক্ষাৎ করে দোয়া নেয়ার সুযোগ তৈরির জন্যই সে অসুস্থতার ভান করেছিল মাত্র। কারাবন্দী থাকা অবস্থায় কারা কর্তৃপক্ষের শৃঙ্খলার ব্যত্যয় সাঈদী হুজুর করতেন না। একদিন কোর্ট থেকে বিকেলে লোকজন ফেরত এলে সবাই হুজুরকে দেখে সালাম দেন। হুজুর তখন বিকেলে ফাঁসির সেলের বারান্দায় পায়চারি করছিলেন। এ সময় একজন বলে উঠল হুজুর সবাই আপনার সাথে একটু হাত মেলাতে চায়, আপনি কি একটু গেটের বাইরে আসবেন? হুজুর তখন বিনয়ের সাথে জানালেন, আপনাদের আবেগকে আমি শ্রদ্ধা করি, আপনাদের প্রতি আমার সালাম ও দোয়া থাকল, কিন্তু এই মুহূর্তে গেটের বাইরে যাওয়ার অনুমতি আমার নেই এ জন্য দুঃখিত। বন্দী থাকা অবস্থায়ও কর্তৃপক্ষের নিয়মের প্রতি তিনি এমন শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। উপজেলা নির্বাচনে হুজুরের ছেলে মাসুদ বিন সাঈদী ভাই পিরোজপুরের জিয়ানগর উপজেলা নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হলে আমি হুজুরের কাছে মিষ্টি এবং খেজুর পাঠাই। নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে হুজুরের সাথে যেদিন মাসুদ সাঈদী ভাই দেখা করতে আসেন সেদিন আমার সাথেও মাসুদ সাঈদী ভাইয়ের দেখা হয়।

সর্বশেষ জামিনে ২৫ জুন’১৪ জামিনে মুক্ত হয়ে বের হওয়ার আগে ৭ জুন শনিবার বিকেল ৪টায় হুজুরের সাথে সাক্ষাৎ করি। হুজুর তখন সালাতুল আসরের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। আমার জামিনের সংবাদটি হুজুরকে জানিয়ে সহি সালামতে মুক্তি পাওয়ার প্রত্যাশায় দোয়া চাইলাম। কারণ জেলগেটে রিঅ্যারেস্ট ছিল সাধারণ ঘটনা। এর আগেও আমি কারা ফটকে দুইবার রিঅ্যারেস্ট হয়েছিলাম। সাথে সাথেই হুজুর দোয়া করলেন, আল্লাহ যেন আমাকে বিপদমুক্ত অবস্থায় বের করে দেন এবং সহি সালামতে মুক্তির ব্যবস্থা করে দেন। পাশাপাশি আমি গ্রেফতারের পর আমার বাবার স্ট্রোক করার বিষয়টি জানাই, আমার আম্মা জায়নামাজে বসে হুজুরের জন্য দোয়া করেন জানালে তিনি আব্বা এবং আম্মার জন্য আল্লাহর দরবারে উত্তম জাযাহ এবং নেক হায়াত কামনা করেন। আমি হুজুরের সাথে আমিন আমিন ধ্বনি তুলি। র‌্যাবের নির্যাতনে আমার কোমরে, কাঁধে আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার ঘটনা হুজুর প্রথম সাক্ষাতেই জেনেছিলেন তাই তিনি আমার শারীরিক অবস্থার খোঁজখবরও নেন। বিশেষ করে আমার কোমরের কী অবস্থা জানতে চান। কথাবার্তার এক পর্যায়ে তরুণদের উদ্দেশে বিশেষ করে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে হুজুরকে কিছু বলার জন্য অনুরোধ করি যে কথাগুলো আমি মুক্ত হয়ে নেতাকর্মীদের বলতে পারবো। তিনি বলতে শুরু করলেন- “আমি নিজের জন্য কখনো চিন্তা করি না, কারণ আল্লাহ তায়ালা আমার নসিবে যা রেখেছেন তাই হবে- কিন্তু আমি সবসময় চিন্তা করি বৃহত্তর আন্দোলন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ছাত্রশিবির, ছাত্রীসংস্থা ও মহিলা জামায়াতকে নিয়ে। তাদের ওপর বর্তমানে যে ভয়াবহ জুলুম-নির্যাতন চলছে তা নিয়ে টেনশন করি। তিনি বলেন, রাতের আঁধারে দড়িতে ঝুলে মিথ্যা অপবাদে নয়, বরং কুরআনের ময়দানে, জিহাদের ময়দানে আমি সরাসরি শাহাদাত বরণ করতে চাই। আমি সবসময় লক্ষ লক্ষ জনতাকে সাথে নিয়ে শহীদি মৃত্যু কামনা করেছি। আমার এ কামনায় আমি কখনো ভান করিনি বরং আমি অন্তরের অন্তঃস্থল থেকেই শহীদি মৃত্যু চেয়েছি। সাঈদী হুজুর আরো বলেন, কলিজার টুকরা সংগঠন ছাত্রশিবিরের যুবকদের জন্য আমি সবসময় দোয়া করি। যখন দেখি শিবিরের তরতাজা যুবকরা পঙ্গু হয়ে, চোখ হারিয়ে নির্যাতনে ক্ষতবিক্ষত হয়ে একের পর এক জেলে আসছে, ক্র্যাচ ভর দিয়ে হাঁটছে তখন আর নিজের অশ্রুকে সামলাতে পারি না। আমি দেখলাম এ কথা বলতে বলতে হুজুরের দু’চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি ঝরছে। হাত দিয়ে চোখের পানি মুচতে মুচতে তিনি বলছিলেন, আমি সবসময় দোয়া করি হে আল্লাহ! তুমি বাংলাদেশকে রক্তাক্ত মিসর বানাইয়োনা, বাংলার সবুজ জমিনকে ধর্মনিরপেক্ষাতাবাদীদের করদরাজ্যে পরিণত করো না। হুজুরের এ কথার প্রত্যুত্তরে আমি আমিন আমিন বলছি আর আমার দু’চোখ দিয়েও তখন অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল।
সাঈদী হুজুর আরো বলেন- তবে এ অবস্থা থেকে দেশ ও জাতিকে মুক্তি দিতে পারে একমাত্র আল্লাহপ্রেমিক যুবকরাই। তিনি রাসূল (সা)-এর একটি হাদিস উল্লেখ করে বলেন, রাসূল (সা) বলেছেন, যুবকরাই সমাজ পরিবর্তনের মূল হাতিয়ার। যুবকদেরকে নিয়েই তিনি ইসলাম প্রতিষ্ঠার লড়াই করেছেন। ইসলামের প্রাথমিক যুগে ত্যাগ-তিতিক্ষার যুগে যারা ইসলাম কবুল করেছিল তাদের অধিকাংশই ছিল যুবক, তাদের অনেকেরই বয়স ছিল ৪০-এর নিচে। আর যারা ইসলামের বিরোধিতা করেছিল তারা ছিল বৃদ্ধ, ৪০-এর ঊর্ধ্বে বয়স। সাঈদী হুজুর আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, যুবকরা যদি যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারে তাহলে একদিন বাংলাদেশ হবে ইসলামের বাংলাদেশ। তিনি আরো বলেন, আমার দৃঢ়বিশ্বাস জেল জুলুম নির্যাতনের ফলে বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলন ৫০ বছর এগিয়ে গেছে। বাংলাদেশে ইসলামী আন্দোলনের ওপর দমন, নিপীড়ন, জুলুম নির্যাতন দেখে মনে হচ্ছে বাংলাদেশ এখন মক্কি যুগের শেষ অধ্যায়ে উপনীত হয়েছে। আমরা যদি ধৈর্য ধারণ করে ঈমানী শক্তিকে মজবুত করে এই অবস্থা কাটিয়ে উঠতে পারি, তাহলে আমাদের জন্য সুদিন অপেক্ষা করছে। তিনি তার লেখা ‘নন্দিত জাতি নিন্দিত গন্তব্যে’ বইটি আমাকে উপহার দেন। এরপর হুজুরের ইমামতিতে সালাতুল আসর আদায় করি। নামাজ শেষে হুজুর আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেয়ে দোয়া করেন। এরপর আমার কাঁধে ভর দিয়ে হেঁটে হেঁটে মেডিক্যাল এরিয়ার গেট পর্যন্ত এসে আমাকে বিদায় জানান আর বিদায় মুহূর্তে বলেন, ‘যাও, মুক্ত হয়ে দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়, আল্লাহ তোমাদের সহায় হবেন, ইনশাআল্লাহ।

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হুজুর সকাল-বিকাল দু-বেলা একজনের কাঁধে ভর দিয়ে হাঁটাহাঁটি করেন। তিনি নিয়মিত লেখালেখি করেন। বিছানায় বসে লিখতে লিখতে ওনার কোমর ও হাঁটুর ব্যথা বেড়ে গেছে। আমাদের পক্ষ থেকে একটি ছোট্ট টেবিলের ব্যবস্থা করা হলেও কারা কর্তৃপক্ষ ৩ মাস গেটে রেখে পরে ওনাকে দেয়া সম্ভব না জানিয়ে ফেরত দেয় টেবিলটি। শেষ দিন সাক্ষাতে ওনাকে আমি নিজ হাতে টেনে বিছানা থেকে উঠতে সাহায্য করি। তখন হুজুর আক্ষেপ করে বলছিলেন, টেবিল না থাকায় ওনার কোমর ও হাঁটু ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। স্মৃতিচারণমুলক এই লেখাটি কারাগারে থাকা অবস্থায়ই লিখেছিলাম। জানি না এখন বিশ্ববরেণ্য মুফাসসিরে কুরআন, কোটি কোটি যুবকের হৃদয়স্পন্দন কুরআনের পাখি আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী হুজুর কারাগারে কেমন আছেন। মহান প্রভুর দরবারে দোয়া করছি আল্লাহ যেন ওনাকে মুক্ত করে আবার কুরআনের মাহফিলে ফিরিয়ে দেন, আমিন।